রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০১ অপরাহ্ন
মুফতি শরিফুল আজম:
দোয়ায় আল্লাহর কাছে এমন কিছু চাওয়া, যা পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। যেমন দুনিয়ায় চিরস্থায়ী হওয়ার দোয়া করা, কোনো প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জীবিত হওয়ার দোয়া, দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখার আকাক্সক্ষা, সমস্ত মানুষের কর্তৃত্ব লাভ করা, পানাহার ও শ্বাস ছাড়া জীবন ধারণের ইচ্ছা, স্বামী ছাড়া সন্তান কামনা করা, চাষাবাদ ছাড়া ফল পাওয়ার আশা করা, স্বর্ণের পাহাড় কামনা করা ইত্যাদি। এগুলো চাইলে সে কখনো তা পাবে না। কেননা এগুলো চিরন্তন নিয়মের বহির্ভূত। উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়াও দোয়ার ক্ষেত্রে যেসব ভুল-ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। এর কয়েকটি হলো-
পরিবার, সম্পদ ও নিজের জন্য বদদোয়া: ব্যক্তিজীবনের পরতে পরতে নানাবিধ সমস্যা আসতে পারে। সুতরাং কখনো কঠিন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেও বদদোয়া করা যাবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের অভিশাপ দিয়ো না। তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের অভিশাপ দিয়ো না, তোমরা তোমাদের চাকর-চাকরানীদের বদদোয়া করো না এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদের প্রতি বদদোয়া করো না। কেননা এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে যখন দোয়া (বা বদদোয়া) করলে তা কবুল হয়ে যায়। কাজেই তোমার ওই বদদোয়া যেন ওই মুহূর্তের সঙ্গে মিলে না যায়। -সুনানে আবু দাঊদ : ১৫৩২
পাপকর্ম ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া : কেউ কেউ আত্মীয়দের থেকে পৃথক হওয়ার জন্য দোয়া করে অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরির দোয়া করে। এমন দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করবেন না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা কবুল করা হয় যদি না সে পাপ কর্মের জন্য কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দোয়া করে। -সহিহ মুসলিম : ২৭৩৫
দোয়ায় তাড়াহুড়া : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুমিন ব্যক্তিমাত্রই আল্লাহর দিকে মুখ করে তার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে এবং (ফল লাভে) তাড়াহুড়া না করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন। হয় তা তিনি তাকে দুনিয়াতে অবিলম্বে দান করেন অথবা তার আখেরাতের জীবনের জন্য তা সঞ্চিত রাখেন। সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার তাড়াহুড়া কীরূপ? তিনি বলেন, সে বলে, আমি তো দোয়ার পর দোয়া করতে থাকলাম, কিন্তু তা কবুল হতে দেখছি না। -আল আদাবুল মুফরাদ : ৭১১
রহমতকে সংকুচিত করা : অনেকে বলে, হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাদের এলাকায় বৃষ্টিবর্ষণ করুন অথবা হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাকেই সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাকে রিজিক দিন ইত্যাদি। এমন দোয়া করতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার নামাজে দাঁড়ান। আমরাও তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম। এ সময় এক বেদুঈন নামাজের মধ্যে থেকেই বলে উঠল, ‘হে আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মদের ওপর রহম করুন এবং আমাদের সঙ্গে আর কারও প্রতি রহম করবেন না। নবী কারিম (সা.) সালাম ফেরানোর পর বেদুঈন লোকটিকে বললেন, তুমি একটি প্রশস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আল্লাহর রহমতকে সংকুচিত করেছ। -সহিহ বোখারি : ৬০১০
দোয়ার আদব পরিত্যাগ : দোয়া কবুল হওয়ার যেসব আদব রয়েছে সেগুলো পরিত্যাগ করা। খাত্ত্বাবি বলেন, এটা বলা কখনই যুক্তিযুক্ত হবে না হে কুকুরের প্রতিপালক! হে বানর ও শূকরের প্রতিপালক! এ ধরনের নিম্নশ্রেণির প্রাণী ও জমিনের কীটপতঙ্গ দ্বারা দোয়ায় আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা। যদিও সব কিছু আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। -শানুদ দোয়া : ১৫৩
দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে অন্যের ওপর ভরসা: এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের পাপ ক্ষমার জন্য স্বয়ং আল্লাহর কাছে দোয়া না করে পীর-ফকিরদের দারস্থ হয়। কখনো মৃত পিতা-মাতার জন্য আলেম-উলামার দ্বারা দোয়া করিয়ে নেয়। অথচ পিতা-মাতার কবরে নেকি পৌঁছানোর জন্য কোনো আলেম-উলামা নয় বরং তার দোয়াই পিতা-মাতার কবরে পৌঁছবে। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ক. সদকায়ে জারিয়া, খ. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয়, গ. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্য দোয়া করতে থাকে। -সহিহ মুসলিম : ১৬৩১
দোয়ায় মৃত্যু কামনা করা : যখন বিপদ কঠিন হয় তখন মানুষ অধিক ব্যথাতুর হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যু কামনা করে থাকে। এটা মারাত্মক ভুল। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কোনো বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থায় পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে সে (মৃত্যু কামনা না করে) বলবে, হে আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে জীবিত রাখো, আর যখন আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আমার মৃত্যু দাও। -সহিহ বোখারি : ৫৬৭১
ইসলামি স্কলাররা বলেন, দোয়া করে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং দোয়া কবুল হোক বা না হোক আল্লাহর কাছে দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিম্নোক্ত হাদিসটি স্মরণ রাখতে হবে। যেখানে তিনি বলেছেন, কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গোনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির একটি দান করেন। ১. হয়তো তাকে তার কাক্সিক্ষত বস্তু দুনিয়ায় দান করেন, অথবা ২. তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন অথবা ৩. তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূর করে দেন।
ভয়েস/আআ